ফেসবুকের মাধ্যমে নিজের একটি ব্যবসা শুরু করার কথা ভাবছেন? এবং ফেসবুকেই আপনার ব্যবসার প্রচার প্রচারনার কাজ করতে চাচ্ছেন? তাহলে ফেসবুক মাধ্যমে ব্যাবসা পরিচালনা সম্পর্কিত এই কন্টেন্টটি আপনার জন্যই ! এখানে আপনি পাবেন ফেসবুকে আপনার বিজনেস পরিচালনা করার কৌশল ও এ বিষয়ক সকল পরামর্শ। ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করতে এবং পণ্যের বিক্রয় বাড়ানোর জন্য ফেসবুকে ব্যবসা করার নিয়ম গুলি জানা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
কিভাবে ফেসবুক ব্যাবহার করে সফলভাবে ব্যাবসা পরিচালনা ও প্রচারনা করবেন?
আপনার ফেইসবুক একাউন্ট বা পেইজের প্রচারের মাধ্যমে আপনি যত বেশি সংখ্যক লোকের কাছে পৌঁছাতে পারবেন, ঠিক তত বেশি পণ্য আপনি সেল করতে পারবেন। তাই, কীভাবে বিনামূল্যে ফেসবুকে ব্যবসার প্রচারনার করবেন, আসুন সেই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো জেনে নিই।
১।তথ্যপূর্ন একটি ফেইসবুক পেইজ ওপেন করুনঃ
প্রথমে আপনাকে বিজনেস পরিচালনার জন্য একটি পেজ খুলতে হবে।খেয়াল রাখবেন,আপনার ফেসবুক বিজনেস পেইজটি যেন ব্যাবসার যাবতীয় তথ্য দিয়ে একদম পূর্ন অবস্থায় থাকে।ব্যাবসার
ফেইসবুক পেইজে আপনার ব্যবসা সম্পর্কৃত প্রয়োজনীয় সবগুলো তথ্য দিতে একদমই দ্বিধা করবেন না।সকল তথ্য ইনক্লুড করা থাকলে, গ্রাহকরা গুগলে স্থানীয় বিজনেস সার্চ দিয়ে বা স্থানীয় ব্র্যান্ডের কোনো প্রতিষ্ঠানের সম্পর্কে জানতে ফেসবুকে সার্চ করে, সেক্ষেত্রে আপনার পেইজটি অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সার্চ তালিকায় টপলিস্টে থাকবে।আপনার থেকে প্রোডাক্ট ক্রয় কিংবা সেবা নেওয়ার জন্য ক্রেতাগন আপনার পেইজে যোগাযোগের জন্য কোন কোন মাধ্যম উল্লেখ আছে তার সন্ধান করবে।মোবাইল নম্বর, ইমেল বা ওয়েবসাইটের মতো বিভিন্ন ধরণের যোগাযোগের মাধ্যম উল্লেখ রাখুন যাতে তারা তাদের কাছে সহজ বা ইজি মনে হওয়া মাধ্যমটি ব্যবহার করে জটিলতা ছাড়াই আপনার সাথে কন্টাক্ট করতে পারে।আরেকটি।জরুরী কথা হলো, যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কাস্টমার মেসেজের উত্তর(রিপ্লাই) দেওয়ার ট্রাই করুন।
২।অাপনার বিজনেস পেইজে অফিসিয়াল চমৎকার একটি ছবি ব্যবহার করুনঃ
ফেইসবুক পেজের প্রচারনা চালানোর পর বিভিন্ন লিংক থেকে অনেক ফেসবুক ইউজারগন আগ্রহের সাথে আপনার বিজনেস পেইজটি ভিজিট করতে বা দেখতে আসে,তাই তার পূর্বেই আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে একটি অফিসিয়াল কভার ফটো নিয়ে! যেন ভিউয়াররা প্রোফাইল পিক দেখেই আরো জানতে আগ্রহী হয়ে ওঠে।
গুরুত্বপূর্ণ কিছু কারণে এই কভার ফটো ফেসবুক বিজনেস পেইজ এর খুব ইউনিক বৈশিষ্ট্য। উদাহরণস্বরূপ, এটিই আপনার প্রতিষ্ঠানের প্রথম ফ্রি ও প্রকাশমান জিনিস যা লোকেরা আপনার পেইজে ঢুকলেই দেখতে পাবে। আপনি বিনা পয়সায় ভিজিটরদেরকে আকৃষ্ট করতে এই সুযোগ কাজে লাগাতে পারেন। তাই যতটা সম্ভব দায়িত্ব নিয়ে সৃজনশীল ও আকর্ষী কভার ফটো ব্যবহার করুন। খেয়াল রাখবেন প্রোফাইল পিকচারে যেন আপনার ব্যবসায়ের গল্পটি সহজভাবে ফুটে উঠে।
৩।সঠিক পণ্য বা সেবা নির্বাচন করুনঃ
ব্যবসা শুরু করার পূর্বে সবার প্রথমে আপনাকে দেখতে হবে অনলাইনে কি ধরনের পণ্যের চাহিদা ও বাজার রয়েছে। এবং সেগুলোতে প্রতিযোগিতা কেমন। সেই বিষয়ে সূক্ষ্মাতিসূক্ষ্ম ধারনা আপনার রাখতেই হবে। এটি বেশ গুরুত্বপূর্ণ বিষয়, কারণ বাজার পরিস্থিতি না বুঝে আন্দাজে ব্যবসায় ইনভেস্ট করে বসলে লাভের চেয়ে লস হাওয়ায় সম্ভাবনাই বেশি। আপনি যদি কোনো একটা কাজে একটু বেশি দক্ষ হয়ে থাকেন, তাহলে সেই কাজ দিয়েও সার্ভিস দিতে পারেন আপনার কাস্টমারদেরকে। কিন্তু অনলাইনে সেই পণ্য অথবা কাজের চাহিদা থাকলে তবেই আপনার সফল হওয়ার সম্ভাবনা থাকবে।কোন প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা করবেন, সেটা নির্ধারণ করার পর কোন জিনিসের দাম কিরকম হবে সেটাও প্রতিযোগী পেইজগুলোর সাথে সামঞ্জস্য রেখে নির্ধারণ করুন।
৪। পণ্যের প্রচারে বেস্ট ছবিগুলো ব্যাবহার করুনঃ
অনলাইনে ক্রেতারা কোনো পণ্যই সরাসরি দেখে কিনে না, তারা ছবি দেখেই কিনেন। তাই আপনার পণ্যের ছবিটা খুবই ভালো রেজ্যুলেশন সম্পন্ন ও আকর্ষণীয় হতে হবে।তবে আমি আবার এটা বলতে চাইনি যে, আপনি এডিট করে করে পণ্যের আসল চেহারাই পাল্টে দিবেন! বলতে চেয়েছি ছবিগুলো যেন সুন্দর হয়। ছবির সাথে বাস্তবের সামঞ্জস্য রেখে, পর্যাপ্ত লাইটিংয়ে, সুন্দর ব্যাকগ্রাউন্ড এ মানসম্পন্ন ক্যামেরা দিয়ে ছবি তুলবেন। ছবি আকর্ষণীয় হবে এটা ঠিক, তবে অনেক বেশি পরিমানে অতিরঞ্জিত নয়। পণ্যের মানটা যেন ছবি দেখেই ধারণা করা যায়।
৫।প্রমোশন পোস্ট বা প্রমোশনাল কন্টেন্ট এর লেখার মান বজায় রাখুনঃ
ক্রেতাদের দৃষ্টি আকর্ষণ করার জন্য প্রতিটি পোস্টে আপনার পণ্যগুলির ভাল মানের বিবরণ দিন। প্রত্যেকটি পণ্যে আপনার প্রচেষ্টা,পরিশ্রম ও দায়বদ্ধতা দৃশ্যমান হওয়া উচিত।
লেখার ভঙ্গি যথাসম্ভব সহজ ও সাবলীল রাখুন।আর আপনার উচিত আপনার টার্গেট কাস্টমারদের সম্পর্কে লেখার চেষ্টা করা। আপনার পণ্যগুলি কেন অন্যদের থেকে সেরা তা বিস্তারিতভাবে উল্লেখ করুন যাতে গ্রাহকরা এটি সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা পান আর সহজেই সিদ্ধান্ত নিতে পারেন এটি কিনবেন কিনা।পোস্ট থেকেই মানুষ জানতে চান। সাধারণত অনেকেই ইনবক্সে এসে বিস্তারিত প্রশ্ন করতে চান না। তাদের কথা মাথায় রেখে পোস্টেই বিস্তারিত প্রকাশ করুন।
৬।ব্যাবসার পেইজে লাইভ করুনঃ
অনেক ক্রেতাই আছে যারা, কেবলমাত্র পণ্যের ছবি এবং বর্ণনার উপর বিশ্বাস রাখতে পারে না। পণ্য বাছাই করার সুবিধার জন্য তারা সরাসরি দেখা ও যোগাযোগ করতে পছন্দ করে। লাইভ স্ট্রিমিংয়ে আপনি সরাসরি ক্রেতার সাথে ইন্টারেক্ট করতে পারেন।
আপনার লাইভ প্রোগ্রাম ঘোষণা দেওয়ার সময় একটি স্মার্ট ও আকর্ষণীয় শিরোনাম চয়ন করুন।কারণ এর নোটিফিকেশন পৌঁছে যাবে আপনার ফলোয়ারদের কাছে, এবং এটি দেখেই তারা লাইভটি দেখতে বেশ আগ্রহী হবে। আর খেয়াল রাখবেন লাইভে অবশ্যই ভদ্র, শালীন পোশাক পরে আসবেন ও শুদ্ধ ও সাবলীলভাবে কথা বলবেন।কৃত্রিমতা পরিহার করুন।
৭।ক্রেতাদের সাথে বন্ধুত্বপূর্ণ সুসম্পর্ক তৈরী করুনঃ
আপনার অনলাইন ব্যবসার পেইজে যদি অনেক ফ্যান- ফলোয়ার থাকে, তাহলেই ভাববেন না যে খুব বিক্রি হবে। আপনাকে আপনার কাস্টমারদের সাথে খুবই বন্ধুত্বপূর্ণ আচরণ করতে হবে। গ্রাহকদের সাথে যথেষ্ট বিনয়ের সাথে আচরণ করাটাই অনলাইন বিজনেসের একটি কৌশল।কেবলমাত্র”হায়!”, “হ্যালো স্যার”, “জ্বী স্যার”, “ওকে স্যার” এসব বা এগুলোর মতো কেবল কয়েকটি আনুষ্ঠানিক শব্দ দিয়েই কথাবার্তা শেষ করে দেওয়াটা ঠিক হবেনা। তাদেরকে যথেষ্ট গুরুত্ব দেওয়ার চেষ্টা করুন এবং তাদের কথাগুলো মনোযোগের সাথে শুনুন।তাদের সাথে দীর্ঘস্থায়ী একটি সম্পর্ক গড়ে তোলার জন্য খুব চেষ্টা করুন। এটি তাদেরকে পরবর্তীতে আপনার কাছ থেকে আরো জিনিস কেনার জন্য অনুপ্রাণিত করবে।গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ স্বয়ংক্রিয় ও আরো বেশি আধুনিকভাবে করতে চাইলে তৈরি করে নিতে পারেন একটি চ্যাটবট। চ্যাটবট মূলত আপনার শিখিয়ে দেয়া কাজগুলো পরবর্তীতে অটো পালন করবে।এতে আপনারও সময় বাচলো আর ক্রেতাও তথ্যটি সহজেই পেলো।
৮।গ্রাহকদের রিভিউগুলো গুরুত্বের সাথে নিন –
একজন ভালো মানের ব্যবসায়ী গ্রাহকদের কাছ থেকে আসা নেগেটিভ রিভিউ কিংবা নেতিবাচক প্রতিক্রিয়াকে উড়িয়ে না দিয়ে আমলে নেন। ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য গ্রাহকের সমস্ত রিভিউ এবং পরামর্শ বিশ্লেষণ করা উচিত। আপনি যদি তাদের দেয়া পরামর্শকে সম্মান করেন তবে তারা মনে মনে সম্মানিত বোধ করবে এবং আপনাকে অনেকদিন মনে রাখবে।মনে রাখবেন, গ্রাহকরাই গ্রাহকদের নিয়ে আসে। তাই তারা কী পছন্দ করে বা অপছন্দ করে, আপনার কাছ থেকে আরো বেটার কি কি সার্ভিস পেতে চায়, কোন ধরনের পণ্য আপনার থেকে কিনতে পারলে তারা খুশি হতো, তা জানার চেষ্টা করুন। ব্যবসায়ের উন্নতির জন্য আপনার পরবর্তী পরিকল্পনায় এই তথ্যগুলির যথাযথ ব্যবহার করুন।
৯. ফেসবুকের ম্যাপ এ আপনার লোকেশনটা সংযুক্ত করুন:
ফেসবুক কোম্পানি একটি গুগল এপিআই ব্যবহার করে যাতে এটি ব্যাবহার করে আপনি যে জায়গাগুলিতে গিয়েছেন সেখানে নিজেকে চিহ্নিত করতে পারেন, নিজের অবস্থানটা জানতে পারেন। ফেসবুকের এই বৈশিষ্ট্যটি “চেক-ইন” নামে বেশি পরিচিত।
আপনি কখনো কখনো হয়ত এই অপশনটিকে ব্যাবহার করে থাকবেন। কিন্তু আপনার ব্যবসায়ে এটির ভূমিকা বা গুরুত্ব কি,তা সম্পর্কে জানেন না।
এই “চেক ইন” অপশনটি লোকাল ব্যবসার জন্য বিশেষভাবে গুরুত্বপূর্ণ। যখনই কোনও গ্রাহক “চেক ইন” করেন, ফেসবুক তাকে স্থানীয় অনলাইন ব্যবসা কিংবা কোন ব্র্যান্ড এর বিজ্ঞাপন প্রদর্শন করে। তবে এই অপশনটি কেবল স্থানীয় ব্যবসায়ের জন্য উপযোগী। লোকাল কাস্টমার বা স্থানীয় গ্রাহকদের ধরে রাখার জন্য আপনি কিছু মূল্যছাড় বা কোনো আকর্ষণীয় অফার রাখতে পারেন।