Uncategorized

বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসা শুরুর আগের গাইডলাইন সমূহ

বাংলাদেশে ই কমার্স ব্যবসা শুরু করার জন্য পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন সম্পর্কে যারা জানতে আগ্রহী, তাদের জন্য আজকের এই লেখাটি।এখানে আলোচনা করবো প্রথম পর্যায়ে যেসব দিকনির্দেশনা অনুসরণ করে ই কমার্স ব্যাবসা শুরু করবেন।

আপনার মাথায় কি ই-কমার্স ব্যবসা কোন প্রক্রিয়ায় শুরু করবেন এবং কিজন্য করবেন এই বিষয়গুলি ঘুরপাক খেতে থাকে? আপনি যেই ব্যবসাটাই করুন না কেন প্রতিটা ব্যবসার ক্ষেত্রে একটি কথা থাকে আর সেটি হল “রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট”। একটা সত্য কথা হলো, একজন উদ্যোক্তার জীবনে যেমন সফলতার অনেক গল্প থাকবে তেমনি অনেক অসফলতার গল্পও থাকবে।এটাই স্বাভাবিক।

কিন্তু আপনি যদি ব্যবসা শুরুর আগে ভালোমতো রিসার্চ অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট করতে না পারেন এবং ব্যবসা শুরু করার পরেও ব্যবসা চলাকালীন সময়ে আপনি সঠিকভাবে এই রিসার্চকে প্রয়োগ করতে না পারেন, তাহলে আপনার ব্যবসায় সফল হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।আচ্ছা, তাহলে চলুন জেনে নেওয়া নিই বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার শুরুর গাইডলাইনঃ

১।মানসিক প্রস্তুতি

আপনি ব্যাবসা করুন বা অন্য যে কোনো কাজই করতে চান তাহলে, আপনার মানসিক প্রস্তুতি সবার আগে শক্ত করতে হবে। কারন আপনার ব্যবসা বা কাজের মধ্যে হাজার ধরনের বাধা বিপত্তি আসতেই পারে। এজন্য মানসিকভাবে আপনাকে প্রস্তুত থাকতে হবে। তাই কোনো বড় কাজ শুরু করতে হলে অবশ্যই মানসিকভাবে প্রস্তুত হয়ে নিতে হবে সেই কাজটির জন্য।

২।নামকরণ :
আপনার ই-কমার্স ব্যবসায় সফলতা পেতে হলে প্রতিষ্ঠানের নামকরণ টা অনেক গুরুত্বপূর্ণ একটি ব্যাপার। আপনার ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম খুবই আকর্ষণীয় হতে হবে যাতে মানুষ খুব সহজেই আপনার ব্যবসাটি খুঁজে পায়। এই জন্য উচ্চারণে সহজ ও ইউনিক একটি নাম দিতে হবে আপনার ব্যবসার। যাতে মানুষ সেটা মনে রাখতে পারে ও খুব সহজে নামটি বলতে পারে।

ডোমেইনটি ফাঁকা আছে কিনা এই বিষয়টি নাম সিলেক্ট করার সময় অবশ্যই আপনাকে খুঁজে নিতে হবে। আর সেই নামটি যদি ফাঁকা না থাকে তাহলে ওই নামের সাথে মিল রেখে অন্য একটি ইউনিক নাম আপনাকে খুঁজে নিতে হবে।গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো নামটি অবশ্যই আপনার প্রোডাক্টের সাথে সম্পর্কৃত হতে হবে। আপনার ই- কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামটি যত ছোট হবে ততই আপনার ব্যবসার জন্য তা ভালো হবে।

৩।আইনি কিছু কার্যাবলী:
আপনার ই-কমার্স বিজনেসটার জন্য অবশ্যই ট্রেড লাইসেন্স এবং ব্যবসায়িক বৈধতার সার্টিফিকেট লাগবে। অনেক কাজের ক্ষেত্রে আপনার এটা প্রয়োজন হবে। যেমন ধরুন আপনি অনলাইনের মাধ্যমে পেমেন্ট নিতে গেলে এটি লাগবে। এছাড়াও আরো বিভিন্ন কাজের ক্ষেত্রে আপনার ব্যবসার প্রমাণ দিতে হতে পারে।তখন এসব কাগজপত্রগুলো অবশ্যই লাগবে।

৪।প্রোডাক্ট সিলেক্ট করা:
আপনার ই কমার্স ব্যবসায় সফল হতে হলে মানুষের চাহিদা মাফিক, সঠিক প্রোডাক্টটি নির্বাচন করা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তাই আপনাকে অবশ্যই কাস্টমারদের ডিমান্ড এবং প্রোডাক্ট এর সহজলভ্যতার দিক চিন্তাভাবনা করে প্রোডাক্টগুলো নির্বাচন করতে হবে।বর্তমানে আমাদের দেশে অনেক ই-কমার্স প্রতিষ্ঠান গড়ে উঠেছে।তাই আপনার প্রতিযোগিতায় টিকে থাকা কিছুটা কঠিন ও চ্যালেন্জিং হবে। আর তাই, আপনাকে এমন কিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে যেন মানুষ শুরুতেই প্রোডাক্টটি কিনতে আগ্রহী হয়। সাধারণত প্রোডাক্টের অনেক ক্যাটাগরি থাকে।আপনি সেখান থেকে যেকোনো একটি ক্যাটাগরি নির্বাচনক করুন। প্রথমদিকেই আপনি অনেক ধরনের প্রোডাক্ট নিয়ে ব্যবসা শুরু করতে যাবেন না।আপনাকে প্রথম অবস্থায় অল্পকিছু প্রোডাক্ট নিয়ে কাজ করে আগে মানুষের আস্থা ও বিশ্বাস অর্জন করতে হবে।তাই এই ক্ষেত্রে আপনাকে খুবই ভালভাবে রিসার্চ করতে হবে যে কোন প্রোডাক্টের চাহিদা অনেক বেশি কিন্তু সাপ্লাই অনেক কম। আপনাকে সেই ধরনের প্রোডাক্টগুলো নিয়ে কাজ শুরু করতে হবে।

৫।প্রোডাক্ট সোর্স:
আপনি কোন ধরনের প্রোডাক্ট সিলেক্ট করছেন তার উপর ভিত্তি করে প্রোডাক্ট এর সোর্স খুঁজতে হবে। আর এর জন্য আপনাকে সবথেকে বেশি খেয়াল রাখতে হবে প্রোডাক্ট এর দামের প্রতি। আপনি যত কম খরচে আপনার প্রোডাক্ট গুলো সংগ্রহ করতে পারবেন আপনি তত বেশি বেনিফিটেড হবেন।আপনি কম দামে কেনা পন্যটা কম দামে বিক্রি করতে পারবেন, এতে আপনার বিক্রি বাড়বে। আপনাকে যদি দেশের সকল উন্নত সব ই কমার্স প্রতিষ্ঠান সাথে তালে তাল মিলিয়ে টিকে থাকতে হয় তাহলে অবশ্যই প্রোডাক্ট সংগ্রহের ব্যাপারে মনোযোগী হতে হবে। একদম মূল সোর্স থেকে প্রোডাক্ট সংগ্রহ করুন।

৬।ডেলিভারি:
সঠিক সময়ে প্রডাক্ট ডেলিভারি হলে আপনারা খুব সহজেই কাস্টমারের মন জয় করতে পারবেন। কাস্টমার যেন খুব দ্রুত এবং অক্ষতভাবে প্রডাক্টটি হাতে পায় সেদিকে ফোকাস করতে হবে সবার আগে। যদি এই কাজটাতে ব্যর্থ হন তাহলে রিটার্ন কাস্টমার পাওয়ার সম্ভাবনা কমে যাবে এবং নিউ কাস্টমার যারা রয়েছে তাদের সংখ্যাও ধীরে ধীরে কমতে থাকবে। আর এই ক্ষেত্রেও আপনাকে দেখতে হবে যেন সর্বনিম্ন খরচে উন্নত এবং বেস্ট সার্ভিস তাদের দেওয়া যায়। আর এর জন্য আপনি কুরিয়ার সার্ভিসের কোম্পানিগুলোর শরনাপন্ন হতে পারেন। অনেক কুরিয়ার প্রতিষ্ঠান রয়েছে যারা অন্যের পণ্য ডেলিভারি করে থাকে।আপনাকে আরো গুরুত্বপূর্ণ একটি কাজ করতে হবে। সেটি হলো অর্ডার লোকেশন নোট।এটির মাধ্যমে আপনি বুঝতে পারবেন কোন এলাকায় বা লোকেশনে আপনার পন্যের চাহিদা বেশি।এটা আপনার ব্যাবসায়িক সিদ্ধান্ত গ্রহনে সাহায্য করবে।

৭।পেমেন্ট সিস্টেম :
আপনার প্রোডাক্ট ক্রয়ের পর কাস্টমাররা কোন মাধ্যমে পেমেন্ট করবে সেটার ব্যবস্থা আপনাকে করে দিতে হবে। বর্তমানে অনেক অনলাইন পেমেন্ট সিস্টেম বিদ্যমান। যেমন নগদ,রকেট বিকাশ এবং ব্যাংক সহ আরো অনেক সিস্টেম।এদের মধ্য থেকে আপনাকে একাধিক অপশন সিলেক্ট করতে হবে যার মাধ্যমে কাস্টমার খুব সহজেই আপনার ওয়েবসাইট থেকে পণ্য কেনার মাধ্যমে পেমেন্ট করে দিতে পারবে।

৮।অনলাইন মার্কেটিং:
অনলাইন মার্কেটিং বলতে এখানে বুঝানো হয়েছে সোশ্যাল মিডিয়া এবং ওয়েবসাইট কেন্দ্রীক পন্যের প্রচারনা। অনলাইন জগতের সবগুলো ওয়েতে আপনার পন্যের প্রচারনা চালানো উচিত।কথায় আছে প্রচারই প্রসার। আপনার টুইটার, ইনস্টাগ্রাম,ফেসবুক, ইউটিউব সহ সব ধরনের অ্যাকাউন্ট থাকতে হবে পন্যের প্রচারনার জন্য।আপনার অন্তত একটি ফেসবুক পেজ ও ওয়েবসাইট থাকা জরুরি।কারণ,এই দুই পদ্ধতিতে পন্যের প্রচারনা বেশি ভালোভাবে করতে পারবেন।আপনার ই-কমার্স প্রতিষ্ঠানের নামে একটি ফেসবুক পেজ খুলে ফেলুন এবং আপনার প্রোডাক্টগুলো সেই ফেসবুক পেজে নিয়মিত আপলোড করতে থাকুন। তারপর আপনি নিয়মিত এর কিছু ভিডিও বানাতে থাকুন এবং ফেসবুক পেজ, ইউটিউব চ্যানেলে ও ওয়েবসাইটে সেগুলো আপলোড করতে থাকুন। আপনি চাইলে আপনার ফেসবুক পেজের ভিডিও বা আপনার ইউটিউব চ্যানেলের ভিডিও গুলো খুব তাড়াতাড়ি মানুষের কাছে পৌঁছানোর জন্য সেগুলো বুষ্টও করাতে পারেন।তবে এই ক্ষেত্রে একটা কথা না বললেই নয়, সেটা হচ্ছে শুধু বুষ্ট করলেই হবে না কোয়ালিটি সম্পন্ন বুস্ট করতে হবে। এর জন্য আপনাকে সুন্দর করে ব্যানার ডিজাইন করতে হবে, সুন্দর করে আকর্ষণীয় কনটেন্ট লিখতে হবে এবং আপনার টার্গেট অডিয়েন্স রিসার্চ করে বের করে তাদেরকে টার্গেট করে বুষ্ট করতে পারেন।

তবে ব্যবসার পাশাপাশি এসব কাজ করা খুব ঝামেলার মনে হতে পারে তাই আপনি এসব কাজগুলো একজন প্রোভাইডার এর নিকট হস্তান্তর করতে পারেন। সে এসব দেখাশোনা করবে।

৯।আপনাকে টিম বিল্ড করতে হবে:
ব্যবসার প্রথম প্রথম আপনার কাস্টমার কম থাকবে। তখন আপনি নিজে একা একাই সব কাজগুলো সব করতে পারবেন। কিন্তু আপনার ব্যবসার পরিধি বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে আপনার একার পক্ষে এসব কাজগুলো করা সম্ভব হবে না।

আর এজন্য আপনাকে অবশ্যই দক্ষ একটি টিম বিল্ড করতে হবে। কেননা আপনি একা একা কাজ করে যতদূর না যেতে পারবেন তার চেয়ে বেশি উন্নতি করতে পারবেন একটি সফল টিম বিল্ডের মাধ্যমে। আর এজন্য আপনি বিশ্বস্ত সব সহযোদ্ধাদের খুঁজে বের করে তাদেরকে আপনার টিম মেম্বার বানিয়ে নিন।

পরিশেষে, বর্তমানে ই-কমার্স ব্যবসার পরিধি ক্রমচ বেড়েই চলেছে। প্রতিযোগিতার এই বিশ্বে ই-কমার্স ব্যবসায় সফল হতে হলে অবশ্যই আপনার ব্যবসাকে সবসময় আপডেট রাখতে হবে।

আমাদের আর্টিকেলটি যারা মনোযোগ সহকারে সম্পূর্ণ পড়েছেন তারা অবশ্যই বুঝতে পেরেছেন বাংলাদেশে ই-কমার্স ব্যবসার শুরুর কিছু গাইডলাইন সম্পর্কে। যারা বুঝতে পারেননি তারা অবশ্যই কমেন্ট করে জানাবেন। ধন্যবাদ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *